সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত

প্রিয় পাঠকগণ সুরা ফাতেহা হলো কোরআন শরীফের একটি প্রথম সূরা। ফাতিহা শব্দের অর্থ হল সূচনা বা উদ্বোধন করা এবং এই সূরার রয়েছে অনেক গুরুত্ব যে কোন নামাজের মধ্যে এ সূরা পড়তে হয় এবং প্রত্যেক কাজের শুরুতে এ সূরা পাঠ করতে হয়। কেউ যদি আল্লাহর কাছে মনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দোয়া করে তাহলে এই সূরাটি পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন এবং এই আয়াতে রয়েছে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার সাক্ষাৎ করার সুযোগ এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তায়লা বান্দা যখন একটি কোন আয়াত পড়তে থাকে তখন বান্দার সেই আয়াতের জবাব দিয়ে থাকেন। 
সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত


এ সূরার রয়েছে মোট সাতটি আয়াত। সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় আর শেষ তিন আয়াতে রয়েছে আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা। আল্লাহ তাআলার পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে তিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু কারণ তিনি এই মহাবিশ্বের প্রতিপালক তাই তিনি আমাদের গুনাহ গুলো মাফ করে দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত অধিকারী তিনি যেহেতু আমাদের শেষ দিবসের বিচার দিনের প্রভু সেই বিচার দিনেই তিনি আমাদের প্রতি দয়া বর্ষণ করে থাকেন এবং আমাদের রক্ষা করবেন। 

সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ ঃ

সূরাহ ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ বাংলা অর্থ
১। لْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন। সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।
২। ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ আর রহমা-নির রহীম। অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।
৩। مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। প্রতিফল দিবসের মালিক।
৪। إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন। আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।
৫। ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম। আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।
৬। صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম। তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন।
৭। غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন।(আমিন) এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট।(কবুল করুন)

নামাজের মধ্যে সুরা ফাতিহার ব্যবহারঃ

সূরাটির পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে, "হে প্রভু তুমি আমাদের সরল ও সঠিক পথ দেখাও" এর পরেই কথাটি আরেকটু বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে যার দুই আয়াতে বলা হয়েছে "আল্লাহ যাদের অনুগ্রহ করেছেন, তাদের দেখানো পথটি হলো সরল পথ"। "যারা আল্লাহর এই অনুগ্রহ পেয়েছে তারা কখনো পথভ্রষ্ট হয়নি" এবং আল্লাহ তায়ালা ক্রোধে ক্রোধান্নিত হননি। 

এই সূরার প্রথম অংশে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন এবং শেষ অংশে তিনি আমাদের প্রত্যাশার মাঝখানে বলা হয়েছে "ইয়া কানা বুদু ও ইয়া কানাস্তাইন"। অর্থাৎ "হে প্রভু আমরা একমাত্র আপনারই উপাসনা করি এবং আপনি আমাদের সাহায্য প্রার্থনাকারী"। এই আয়াতকে বলতে পারি যে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের একটি চরম নিদর্শন এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা একমাত্র আল্লাহর প্রতি ইবাদত করে থাকি এবং আমরা একমাত্র তার কাছেই সাহায্য চেয়ে থাকি। 

সূরা ফাতিহার ফজিলতঃ 

একদা মহানবী সাঃ একদল সাহাবীকে একটি অভিযানে পাঠালেন তখন ছিল দীর্ঘদিনের পথ পথে সাহাবীরা একটি লোকালয়ে খুজে পেলেন তারা ভাবলেন এখানে তারা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে। এবং সেখানকার মানুষগুলো সেই সমস্ত সাহাবীদের কখনোই তারা ভালো চোখে দেখল না তারা কোন সাহায্য তো করলোই না বরং তারা তাদের উপর খুব রাগান্বিত হলো এবং অমানবিক আচরণ করল তখন সাহাবীরা সিদ্ধান্ত নিলেন এখানে এক রাতের বেশি থাকা ঠিক হবে না এবং তারা সিদ্ধান্ত নিলেন এখানে এক রাতের বেশি থাকা ঠিক হবে না এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে এই স্থান হতে রওনা দিবেন। 

সে রাতে লোকালয়ের বংশের প্রধানকে এক বিষাক্ত সাপে কামড় দিল তখন চিকিৎসকের হাজার চেষ্টা করেও সেই বিষ নামাতে পারল না কিন্তু বিষ নামানো না গেলে তো মৃত্যু নিশ্চিত এবার লোকজন বাধ্য হয়ে নবীজি সেই সমস্ত সাহাবীদের কাছে এসে তারা বলল আপনাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন যারা এ সাপের বিষ নামাতে পারে আমাদের এক ধরনের থাকে সাপে কামড় দিয়েছে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন আমরা আপনাদের কাছে কোনো রকম সন্তোষজনক আচরণ পায়নি তবুও চেষ্টা করে দেখতে পারি যদি তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন তবে তার বিনিময়ে আমরা কি পাবো? 

সেখানকার লোকেরা বলল যে আমাদের দলনেতা যদি সুস্থ হয়ে ওঠে তো আমরা তার জন্য আপনাদেরকে ৩০ টি ছাগল পুরস্কার ঘোষণা করছি। সাহাবীরা রাজি হলেন এবং সেখানকার গোত্র প্রধানের পাশে গিয়ে "সূরা ফাতিহা" তেলাওয়াত করা শুরু করে দিলেন এবং তারা সেখানে সূরা ফাতিহার মধ্যে বলতে শুরু করলেন ১। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর ২।যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক ৩।যিনি দয়াময় ও পরম দয়ালু ৪।যিনি বিচার দিবসের মালিক এবং ৫। আমরা শুধু আপনার ইবাদত করি ও আপনার কাছে সাহায্য চাই। ৬। আপনি আমাদের সরল ও সঠিক পথ দেখান তাদের পথ যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন এবং ৭। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার শাস্তি বর্ষিত হয়েছে,যারা পথভ্রষ্ট । আমিন।

মন্তব্যঃ সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত

প্রিয় পাঠক আমি আপনাদেরকে সুরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি যদি আপনাদের আমার এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনারা অন্যদের মাঝে শেয়ার করে থাকুন এবং নিজে পড়ে উপকৃত হন ও অপরকে পড়ার সুযোগ করে দিন। এবং এই সূরাটি বেশি বেশি করে আমল করার চেষ্টা করুন কেননা এতে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায় এবং আল্লাহ তাআলার সরাসরি সাক্ষাৎ গ্রহণের ও জবাব দেওয়ার জন্য এই সূরাটি যথেষ্ট যদি কোন ব্যক্তি এই সূরা 40 বার পাঠ করে কোন পানিতে ফু দিয়ে রোগীকে খাওয়াই তাহলে সেই রোগী আরোগ্য লাভ করা হয়ে ওঠে কিন্তু রোগীকে ও আমলকারীকে দুজনকে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url